পটভুমি

বাংলাদেশে দিন দিন প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের সংখ্যা এবং শতকরা হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে প্রবীণ লোকের সংখ্যা ১৯৯১ সালে ছিল ৬০ লক্ষ যা ২০২২ সালে এসে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ যা গত ১১ বছরে ৫০.০১% বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর এভাবে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এক সময় দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫% বৃদ্ধ হিসাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে টিএফআর ১ হওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। এক সময় গড় সন্তান সংখ্যা কমতে থাকবে এবং তার সাথে সাথে প্রবীণ জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ২০১৯ সালে ৬০ বছরের উপরে বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লক্ষ যা মোট জনসংখ্যার ৮% যা ২০৫০ সালে গিয়ে ২১.৯% উত্তীর্ণ হবে অর্থাৎ ৩ কোটি ৬০ লক্ষে পৌছাবে। তার অর্থ হল দেশে প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন হবে প্রবীণ ব্যক্তি। বাংলাদেশের প্রবীণদের জন্য সংবিধানে কিছু নির্দেশনা রয়েছে, তবে তাতে সরাসরি ‘প্রবীণ’ কথাটি উল্লেখ করা না থাকলেও তাতে কিছু ইঙ্গিত রয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৫ উল্লেখ রয়েছে ক. অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা; খ. যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার; গ. সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার। এ উপলব্ধি থেকে ড. হেনরী মনে করেন যে, বৃদ্ধ মানুষদের জন্য তার এবং তার স্বামীর কিছু করা দরকার। এ কথা মাথায় রেখে এই দম্পতি তাদের কল্যাণের কথা ভেবে তাদের ১৮ বিঘা নিজস্ব জমিতে একটি বৃদ্ধ নিবাস তৈরী করার চিন্তা করেন। সেখানে বৃদ্ধদের থাকা-খাওয়ার, চিকিৎসার এবং যত্ন প্রদানের জন্য একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এটি এখন সকল বৃদ্ধদের জন্য উন্মুক্ত।

আমাদের সম্পর্কে

উদ্দেশ্য

এর উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ

ক. এটি কেবল বৃদ্ধদের জন্য পরিচালিত হবে;
খ. এখানে বৃদ্ধ নারী এবং পুরুষ ব্যক্তিরা থাকতে পারবেন;
গ. মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মের লোকেরা থাকতে পারবেন;
ঘ. এখানে প্রবীণদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, প্রার্থনা এবং বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে;
ঙ. প্রবীণদের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হবে;
চ. বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরোক্ষভাবে সহায়তামূলক অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হবে।

লক্ষ্য

এটি সম্পূর্ণ সমাজ কল্যাণের উদ্দেশ্য তৈরী করা হয়েছে। কেবল মানবতার জন্য তা ব্যবহার করা হবে। অন্য কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তা পরিচালিত হবেনা, তবে আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। এটি নিজস্ব অর্থায়নে চলবে, কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো নিঃশর্ত অনুদান প্রদান করলে তা গ্রহণ করা হবে।

সেবাসমূহ

রুম সার্ভিস

প্রতিটি রুমে ইন্টারকম এবং কলিং বেলের ব্যবস্থা আছে এবং তার মাধ্যমে আবাসিত ব্যক্তিরা রুম সার্ভিস নিতে পারবেন। এটি চব্বিশ ঘন্টা চালু থাকবে। তবে প্রত্যেক আবাসিত ব্যক্তিকে ইন্টারকম ব্যবহারের বিষয়ে ধৈয্য ধরে উত্তরের অপেক্ষা করতে হবে।

মিনি কিচেন

প্রতিটি কর্নারে একটি করে মিনি কিচেন আছে যেখানে চা-কপিসহ কিছু পরিবেশনা থাকবে

সুসজ্জিত ডাইনিং রুম

প্রতিটি হাউজের জন্য একটি করে ডাইনিং রুম থাকবে। সেখানে খাওয়ার পানিসহ কিছু ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে থাকবে।

পিজিওথেরাপি রুম

প্রতিষ্ঠানটির একটি আলাদা পিজিওথেরাপি রুম থাকবে। সেখানে আবাসিত ব্যক্তিদের প্রযোজনীয় থেরাপি প্রদান করা হবে।

ক্যান্সার বা লিভার সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে

কোনো ক্যান্সার বা লিভার সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে তাকে নিকটবর্তী কোনো হাসপাতালের কান্সার বিশেষজ্ঞকে দেখানো হবে।

ডায়েট চার্ট

পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিটি আবাসিত ব্যক্তির জন্য একটি ডায়েটের চার্ট থাকবে। সে অনুযায়ী খাদ্য প্রস্তুতের জন্য একটি সহজ পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে যাতে সকলের চাহিদা খুব সহজে মেটানো যায়।

বিনোদন

বিনোদনের জন্য টিভি, নিউজ পেপার, বই, লাইব্রেরীর ব্যবস্থা রয়েছে। যারা শারিরিকভাবে ফিট তাদের জন্য ট্রুর -এর ব্যবস্থা করা রয়েছে ।

উৎসব পালন

প্রতিটি উৎসবকে স্মরণীয় করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা যেমন খাওয়া, পরিচ্ছদ, ফুল, আনন্দ-বিনোদন-এর ব্যবস্থা থাকবে। কিছু সারপ্রাইজও তাদের জন্য থাকবে।

প্রতিষ্ঠাতার বার্তা

হেনরী ভুবন এর প্রতিষ্ঠাতা একজন সমাজসেবী এবং দেশের এক শীর্ষস্থানীয় নারী ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড চলাকালীন তিনি কাছের এবং দূরের বৃদ্ধ মানুষের দুর্দশা দেখতে পান। তাদের জীবনের মর্যাদা সমুন্নত রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন যারা দেশের জন্য এতকিছু করেছেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে অাধুনিক জীবনের জটিলতা এবং অনিশ্চয়তার সাথে তাল মিলিয়ে চলা তাদের জন্য কঠিন। এ কারনে প্রবীণ নাগরিকদের যত্ন নেওয়ার জন্য একটি নিবাস স্থাপনের প্রয়োজন অনুভব করলেন। সেকারণে তার নামে স্থাপিত হেনরি ভুবনটি স্থাপন করেন যাতে তারা মর্যাদা এবং সম্মানের সাথে থাকতে পারনে। সেখানে যেসব সুযোগ সুবিধা রয়েছে যেমন চব্বিশ ঘন্টা নিরাপত্তা, স্পা, জিম, গলফ, টেনিস খেলা, একটি ক্লাবঘর, ফিজিওথেরাপিস্ট, একজন মনোবিজ্ঞানী, সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত কক্ষ, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ, ক্যাবল টেলিভিশন, ওয়াই-ফাই, লন্ড্রি পরিষেবা, স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, সংযুক্ত ওয়াশরুম।

সুবিধাসমুহ

সংস্থা পরিচালনায় বৃদ্ধদের অংশগ্রহণ

বৃদ্ধদের মধ্য থেকে কেউ যদি স্বেচ্ছায় সংস্থাটি পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে চায় তাহলে তাকে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয়া যেতে পারে।

স্বেচ্ছাশ্রম

কেউ যদি স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে কিছু করতে চায় যেমন বৃক্ষ রোপন, সবজী চাষ ইত্যাদি তাহলে তাকে উৎসাহিত করা হবে। তবে হাস-মুরগি পালন বা অন্য কোনো বণ্যপ্রানী পালন ব্যক্তিগতভাবে করা যাবেনা। কতৃপক্ষ চাইলে একুরিয়াম বা কোনো বিশেষ পাখি পালনের ব্যবস্থা করতে পারবে। তবে রান্না-বান্না, খাওয়ার পরিবেশনা ইত্যাদির মতো কাজে শর্তসাপেক্ষ কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে। প্রার্থনা পরিচালনা যেমন নামাজ আদায় বা পরিচালনার ব্যাপারে কিংবা একত্রিত হয়ে ধর্মগ্রন্থ পাঠ কিংবা কোনো পুস্তক থেকে পাঠ করে শুনাতে চাইলে তা অনুমতি নিয়ে করতে হবে। সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি পায় এধরনের কাজকে উৎসাহিত করা হবে।

শিক্ষা

প্রতিষ্ঠানটিতে একটি লাইব্রেরী থাকবে যেখানে বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ থাকবে। যার ইচ্ছা তিনি সেখান থেকে বই ইস্যু করে নিজের রুমে নিয়ে পড়তে পারবেন। তবে গাছের নীচে গিয়ে বসে পড়তে পারবেন। কেউ ছবি আকতে চাইলে বা কোনো বই লিখতে চাইলে তিনি লিখতে পারবেন। তবে আইন বহিভুত কোনো কাজে জড়াতে পারবেন না।

খাদ্য

সবার জন্য সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য প্রদান করা হবে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা

যা করা যাবেঃ সুসম খাদ্য পরিবেশন করা, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, মুক্ত বাতাসে হাঁটা, নিরাপদ হালকা ব্যায়াম করা, নিজকে পরিস্কার পরিছন্ন রাখা, ডায়াবেটিক রোগির পায়ের যত্ন নেয়া, ফিজিওথেরাপী প্রদান করা, অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখা, মাঝে মাঝে বাইরের রেস্টুরেন্ট-এ খাওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি করা যাবে। আত্মীয়-স্বজনের আনা খাওয়ার খাওয়া যাবে তবে তা অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরকে অবহিত করতে হবে।
যা করা যাবেনাঃ বাইরের কোনো অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা, ধুমপানকে নিরুৎসাহিত করা, মদ্যপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রাখা, অনিরাপদ ব্যায়াম করা ইত্যাদি।

ব্যায়াম, ধ্যান ও অনুশীলন

নিরাপদ হালকা ব্যায়াম করা, সম্ভব হলে ধ্যান করা, স্মৃতিশক্তি মজবুত রাখা, কিছু শারিরিক ব্যায়াম অনুশীলন করা যাবে।

ছোয়াচে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে

ছোয়াচে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে আলাদা খাবার পরিবেশনসহ যা যা করণীয় তা তা করা হবে।

সততা স্টোর

ক্যাম্পাসে ‘সততা স্টোর’ নামক একটি দোকান চালু থাকবে যেখানে আবাসিত ব্যক্তিরা কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবেন। সেখানে কোনো বিক্রয় কর্মী থাকবে না, ক্রেতারা নিজ দায়িত্বে তার প্রযোজনীয় পণ্য নিয়ে গায়ে লেখা মূল্য বাক্সে রেখে যাবেন।